পাসপোর্ট অফিসে কর্তাব্যক্তিদের স্বেচ্ছাচারিতা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০২:৩৩ PM , আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৩:১০ PM

পাসপোর্ট রিনিউ করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (MIT) সাবেক এক শিক্ষার্থী। তার জন্মস্থান কাতারের রাজধানী দোহায়। পূর্ববর্তী সব পাসপোর্টে যেটি সঠিকভাবে উল্লেখ ছিল। কিন্তু এবার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে রিনিউ করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি।
আবেদনের দুদিন পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, জন্মস্থান হিসেবে ঢাকা উল্লেখ করে একটি অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মস্থান ঢাকা দেখানো হয়েছে—এই অজুহাতে অফিস দাবি করে, পাসপোর্টেও সেটাই থাকতে হবে। জন্মসনদসহ অন্যান্য বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও সেগুলো কোনো কাজে আসেনি।
এ বিষয়ে সমাধানের জন্য তিনি যোগাযোগ করেন পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রথমে তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) সব শুনতে চান। শুনে বলেন, এটা ঠিক করা সম্ভব না, জাতীয় পরিচয়পত্রই ঠিক। এ সময় তিনি উপপরিচালকের সঙ্গে দেখা করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন। সাথে একজন সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন, আপনারা যা পারেন করেন, কী করবেন? রিপোর্ট করবেন? করেন। কী ক্ষতি করবেন? কিছুই করতে পারবেন না।
অনেকক্ষণ কথা বলার পরে তিনি রাজি হন। উপপরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে দেন। উপপরিচালক ইসমাইল হোসেনকে কিছু বলার আগেই তিনি জানান, এটা এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) করছে। আমাদের কিছু করার নাই। এরপরেও ঠিক করতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিক করে নিয়ে আসেন। এ সময় তিনি পিএসকে বলে দেন, ওনাদের কাজটা তুমি করে দিও ! তার কাজ করবে পিএস। ততক্ষণে পিএস এর বাজে আচরণের কারণ পাওয়া যায়।
পরিচয়পত্র সংশোধন করতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দেশ হিসেবে কাতার দেওয়া গেলেও শহর হিসেবে দোহা যুক্ত করা সম্ভব নয়—সিস্টেমে এমন অপশন নেই বলে জানায় নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। উর্ধ্বতন অফিসাররাও কোনো সহযোগিতা করতে পারেননি।
এদিকে পরিচয়পত্র সংশোধনের পর আবার পাসপোর্ট অফিসে গেলে পিএস জানায়, শুধু সংশোধিত আইডি কার্ড নয়, নির্বাচন কমিশনের লিখিত ভেরিফিকেশন আনতে হবে। উপপরিচালকের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে পিএস সাফ জানিয়ে দেয়, “স্যারের সঙ্গে দেখা করা যাবে না। আমি যেটা বলেছি, সেটাই হবে।”
পরবর্তীতে দেখা যায়, পিএস নিজেই উপপরিচালকের আইডিতে কম্পিউটারে লগইন করে কাজ সম্পন্ন করছেন। এতে প্রশ্ন উঠেছে—পিএসরাই যদি অফিস চালান, তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভূমিকা কী? আর “সবকিছু এআই করছে” বলেও যদি দায় এড়ানো হয়, তবে এত লোকবল কেন?
এসব বিষয়ে জানতে উপপরিচালক ইসমাইল হোসেনের নাম্বারে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগেরদিন ইসমাইল হোসেনকে এই কর্মস্থলে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পরেও যদি এমন দৌরাত্ম্য চলতেই থাকে, তবে আসলে সিস্টেমের পরিবর্তন কতটা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
ভুক্তভোগীদের মতে, “সরিষার মধ্যে ভূত”। এজন্য শুধু সরকার পরিবর্তন করলেই হবে না—প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়া জনগণের ভোগান্তির শেষ নেই।