হঠাৎ কেন ক্ষুব্ধ শান্ত?

হঠাৎ কেন ক্ষুব্ধ শান্ত?

বোঝাই যাচ্ছিল তার পরিবর্তে মেহেদি হাসান মিরাজকে ওয়ানডে অধিনায়ক করার প্রক্রিয়াটি নাজমুল হোসেন শান্তর মনঃপূত হয়নি। মুখ ফুটে না বললেও, ভেতরে ভেতরে শান্ত যে অনেক হতাশ ও ক্ষুব্ধ; তার আভাস মিলেছিল আগেই। তার খুব কাছের মহলে একটা কথা শোনা যাচ্ছিল, শান্ত টেস্ট ক্যাপ্টেন্সিও ছাড়তে পারেন।

গুঞ্জন হলো সত্য। সত্যি সত্যিই টেস্ট ক্যাপ্টেন্সিটা ছেড়ে দিলেন শান্ত। আজ ২৮ জুন, কলম্বোয় দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের পর শান্ত জানিয়ে দিলেন- তিনি টেস্টেও আর অধিনায়কত্ব করতে চান না।

কারণ হিসেবে কাউকে দোষারোপ না করে শান্ত জানান, তিনি মনে করেন না তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়কের একসাথে ড্রেসিং রুমে থাকাটা খুব স্বস্তির।

তার কথা, ‘এই ড্রেসিংরুমে গত কয়েক বছর ধরে, লম্বা সময় ধরে আমার থাকার সুযোগ হয়েছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত যে তিনজন অধিনায়ক দলের জন্য সমস্যা হতে পারে। দলের ভালোর জন্য এখান থেকে সরে আসছি। যদি ক্রিকেট বোর্ড মনে করে যে, তিনটা অধিনায়কই রাখবে, এটা তাদের সিদ্ধান্ত।’

শান্ত আরও বলেন, ‘আমি আশা করব, কেউ যেন এরকম না মনে করে যে, আমি ব্যক্তিগত কোনো কারণে বা রাগ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা দলের ভালোর জন্য, এখানে ব্যক্তিগত কিছু নেই।’

টেস্ট অধিনায়কের সরে দাঁড়ানোর সাথে সাথে নতুন টেস্ট অধিনায়ক নিয়োগের প্রশ্ন উঠলো। এখন দেখার বিষয় বিসিবি কাকে নতুন টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেয়!

জাতীয় দল পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিম শ্রীলঙ্কা থেকে এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘শান্তর সিরিজের মাঝখানে অধিনায়কত্ব ছাড়াটা বিসিবির জন্য ঠিক স্বস্তিদায়ক কিছু নয়।’

অধিনায়ক হিসেবে শান্তর অবদান মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিসিবি পরিচালক ফাহিম মানলেন, ‘আমার মনে হয় একটা ফরম্যাটে হলেও বেস্ট পসিবল চয়েজ ছিল শান্ত। একজন ভালো ও আদর্শ অধিনায়কের সব গুণাবলীই আছে তার ভেতর। আমার মনে হয়, আমাদের বহরে যে কজন আছে, তাদের মধ্যে শান্ত টেস্টে বেস্ট পসিবল চয়েজ ছিল। আমরা একজন লিডারকে হারালাম।’

এমন এক বেস্ট পসিবল চয়েজ যেহেতু হাতছাড়া হলো। এখন কি করবেন? বিসিবি কি নতুন অধিনায়ক খোঁজার মিশনে নামবে? ফাহিমের স্বীকারোক্তি, ‘এখন তো নতুন কাউকে খুঁজে বের করতেই হবে। ইমিডিয়েটলি আলাপ করবো।’

এদিকে সবার জানা, যদিও এ বছর আর দুটি মাত্র টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। সেটা ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ হবে এ বছরের শেষ দিকে। বিসিবি কি এর মধ্যেই অধিনায়ক খোঁজার মিশন শুরু করবে? ফাহিমের কথায় পরিষ্কার, টেস্ট ক্যাপ্টেন খোঁজা ও চূড়ান্ত করার কাজটা আগে-ভাগেই করে রাখতে চায় বিসিবি।

তাহলে কে হতে পারেন নতুন টেস্ট ক্যাপ্টেন? পরিচালক ফাহিমের জবাব, ‘চেষ্টা থাকবে সেরা অপশন বেছে নেওয়ার। সেরা অপশন যেটা হবে, যে অধিনায়ক হলে আমাদের টেস্ট দলকে এগিয়ে নিতে পারবে, আমরা তাকেই দায়িত্ব দিতে চাই।’

তারা কারা? দলে অবস্থান শতভাগ নিশ্চিত হওয়া ছাড়া আর কাউকে টেস্ট দলের ক্যাপ্টেন করাও তো সম্ভব নয়। এমন কাউকে করা যাবে না, যার দলে অবস্থানটাই নিশ্চিত নয়।

সত্যি কথা বলতে কি, বাংলাদেশ দলে এমন অটোমেটিক চয়েজ খুব কম। একদমই হাতেগোনা। শান্ত ছিলেন অন্যতম। এরপর মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামই আছেন কেবল ওই অটো চয়েজের লিস্টে। এখন বিসিবিকে তাদের মধ্য থেকেই একজনকে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিতে হবে।

এর মধ্যে মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহিম দুজনই টেস্ট ক্যাপ্টেন ছিলেন। পারফরমার হিসেবে দুজনই মোটামুটি সফল; কিন্তু তাদের দুজনই পদচ্যুত হয়েছেন। তাই তারা কেউই হয়তো আর দল পরিচালনায় ফিরতে চাইবেন না। এর মধ্যে মুশফিকের টেস্ট ক্যারিয়ার প্রায় শেষের পথে। ধারণা করা হয় শততম টেস্ট পূর্ণ হলে টেস্ট ক্রিকেটকেও বিদায় জানাবেন তিনি। আর মাত্র ২ টেস্ট হলেই বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট পূরণ হবে মুশফিকের।

একবুক অভিমান নিয়ে মুমিনুলও নাকি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনিও আর দল পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চান না। তাহলে বাকি থাকলেন লিটন দাস, মেহেদি হাসান মিরাজ এবং তাইজুল ইসলাম।

তাইজুলের দলে অবস্থান শতভাগ নিশ্চিত। এ মুহূর্তে টেস্টে বাংলাদেশের এক নম্বর বোলার তাইজুল। তারপরও দল পরিচালনার গুরু দায়িত্ব তার কাঁধে অর্পণের সম্ভাবনা খুব কম। সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য টেস্ট অধিনায়ক প্রার্থী দুজন। মেহেদি হাসান মিরাজ ও লিটন দাস।

বলার অপেক্ষা রাখে না দুজনই সাদা বলে একটি করে ফরম্যাটের অধিনায়ক। লিটন দাস আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক। আর মেহেদি হাসান মিরাজের কাঁধে বর্তেছে ওয়ানডে ক্যাপ্টেনের গুরু দায়িত্ব।

যেহেতু লিটন ও মিরাজ একটি করে ফরম্যাটের অধিনায়ক, তাহলে তাদের যাকেই অধিনায়ক করা হোক না কেন, একজনের ওপর দুই ফরম্যাটের ক্যাপ্টেন্সি অর্পিত হবে। এখন বিসিবি সেটা করবে, না টেস্ট ফরম্যাটের জন্য আর কাউকে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেবে সেটাই দেখার। বিসিবি একই ব্যক্তিকে লাল ও সাদা বলে অধিনায়ক করবে কি না- সেটাও দেখার বিষয়।

বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিমের কণ্ঠে আছে তেমনই আভাস। তিনি বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য সেরা অধিনায়ক খুঁজতে বেশ কিছু অপশন হাতে নেব। এর মধ্যে যাকে সেরা মনে হবে তাকেই দায়িত্ব দেওয়া হবে।’

ফাহিম ওই সম্ভাব্য অপশনের তালিকায় মুমিনুল হকের নাম থাকার কথাও বলেন। জাগো নিউজের সাথে আলাপে ফাহিমের কথা, ‘অবশ্যই মিরাজ আমাদের বিশেষ বিবেচনায় থাকবে। আমরা মুমিনুলের সাথেও কথা বলে দেখবো।’

ছবি: বাংলাকন্ঠ


মন্তব্য