খেমারুজের মাটিতে মুনকি -সাগরিকাদের জয়োল্লাস
- বাংলাকন্ঠ ডেস্ক:
- প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০১:৩৩ AM , আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০১:৩৮ AM

মুনকি ও সাগরিকা, এ যেন লাল সবুজের প্রতিশব্দ হয়ে দেখা দিয়েছে ভিনদেশে। এ দুই তরুনীর পায়ের নৈপূর্ন্যে যেন যাদুও হার মেনেছে খেমারুজের মাটিতে। বুধবার ভিয়েনতিয়েনের নিউ লাওস ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে স্বাগতিক লাওসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শুভ সূচনা করলো পিটার বাটলারের শিষ্যরা। এতে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচেই চমক দেখাল লাল-সবুজের জার্সির বাংলাদেশের মেয়েরা।
বাংলাদেশের হয়ে জোড়া গোল করেন ফরোয়ার্ড মোসাম্মৎ সাগরিকা। একটি গোল করেন মিডফিল্ডার মুনকি আক্তার। লাওসের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন ফরোয়ার্ড আন্না কিও ওনসি।
খেলার শুরুতেই কর্নার আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। স্বপ্না রানীর কর্নার কিকে হেড নেন তৃষ্ণা রানী সরকার, কিন্তু লাওসের গোলরক্ষক থংসামুদ ভংখাম্ফান সহজেই বল ধরে ফেলেন।
১১ মিনিটে লাওসের দুটি দারুণ আক্রমণ আটকে দেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক স্বর্ণা এবং অধিনায়ক আফঈদা। কয়েক মিনিট পরই মুনকির লং পাসে শান্তি মার্ডি দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করলেও গোল হয়নি।
১৬ থেকে ২৪ মিনিটের মধ্যে গোলের জন্য মরিয়া আক্রমণ চালায় বাংলাদেশ। তৃষ্ণা, স্বাগরিকা এবং পূজা দাস একাধিকবার সুযোগ তৈরি করলেও প্রথম গোলের দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হয় ৩৬ মিনিট পর্যন্ত।
শান্তির কর্নার থেকে বক্সের মধ্যে লাফিয়ে উঠে দারুণ হেডে গোল করেন সাফ টুর্নামেন্টে ৮ গোল করা সাগরিকা। বিরতির আগে আরও একটি সুযোগ পেয়েছিলেন পূজা দাস, তবে তার শট পোস্টে লেগে ফিরে আসায় লিড বাড়ানো সম্ভব হয়নি।
বিরতির পরেই গোলের সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে মুনকি ও শান্তি সহজ সুযোগ মিস করেন। অবশেষে ৫৮ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মুনকি।
শান্তি মার্ডির পাস থেকে তৃষ্ণা রানী সরকার দারুণভাবে বল দেন মুনকিকে। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ও এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত প্লেসিংয়ে গোল করেন এই মিডফিল্ডার।
৭২ মিনিটে কর্নার থেকে সাগরিকার হেড আবার পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৮১ মিনিটে তাকে হতাশ করেন লাওস গোলরক্ষক ভংখাম্ফান।
৮৬ মিনিটে লাওসের ফরোয়ার্ড আন্না কিও ওনসি বাংলাদেশের তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে একটি গোল পরিশোধ করেন। ফলে ম্যাচে কিছুটা উত্তেজনা ফেরে।
কিন্তু যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটেই জয়ের সিলমোহর দেন মোসাম্মৎ সাগরিকা। মুনকির সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করে বক্সে ঢুকে তৃষ্ণা শট না নিয়ে বল বাড়িয়ে দেন পোস্টের অপর পাশে থাকা সাগরিকার পায়ে। তার হালকা টোকায় বল জড়িয়ে যায় জালে।
শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশের ডাগআউট। লাওস সফরের প্রথম ম্যাচেই বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজের মেয়েরা।
বাংলাদেশকে জিতিয়ে বেশ খুশি রাঙামাটির মেয়ে সাগরিকা। তিনি বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে দুটি গোল করতে পেরেছি।’ লাওসের সঙ্গে বাংলাদেশের মেয়েদের সচরাচর খেলা হয় না। সিনিয়র দল র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে, আবার স্বাগতিকও। তাই খানিকটা শঙ্কাও কাজ করছিল সাগরিকাদের মনে, ‘আসলে আমরা জানতাম না কেমন খেলে। একটু ভয় ভয় লাগছিল। যখন খেলাটা ধরতে পেরেছি, তখন আর সমস্যা হয়নি– ভালো লাগছে খেলাটা।’
লাওসের স্টেডিয়ামে বাংলাদেশি প্রবাসীরা এসেছিলেন সাগরিকাদের উৎসাহ যোগাতে। দেশ থেকেও অনেক ফুটবলপ্রেমী নজর রেখেছিলেন লাওসে। সমর্থকদের আরও সমর্থন চেয়ে সাগরিকা বলেন, ‘যেভাবে সাপোর্ট দিচ্ছে, এভাবে সাপোর্ট দিলে আমরা ভালো কিছু করব ও ভালো খেলা উপহার দেব।’
সাগরিকার জোড়া গোলের পাশাপাশি আরেকটি গোল করেছেন মুনকি আক্তার। তিনিও দর্শকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আজ অনেক সমর্থন পেয়েছি। আশা করি সামনে আরও সাপোর্ট দেবে এবং আমরা জয় আনব।’ নিজের গোল নিয়ে মুনকির প্রতিক্রিয়া, ‘লাওসের বিপক্ষে গোল করব ভাবিনি। গোল পেয়ে ভালো লাগছে।’ নিজের গোল ও জয়ের অভিজ্ঞতার জন্য প্রথমে পরিবার ও তার কোচকে ফোন করবেন।
আজকের ম্যাচের পর এক প্রতিক্রিয়ায় নারী দলটির ব্রিটিশ কোচ পিটার বাটলার বলেন, ‘সব সময় প্রথম ম্যাচ জেতা গুরুত্বপূর্ণ। এতে সামনে চলার পুঁজি দাঁড়ায়।’ বাংলাদেশ প্রায় পুরো ম্যাচই প্রাধান্য বিস্তার করলেও লাওসের এক গোল পরিশোধের পর ম্যাচ ড্রয়ের শঙ্কা জেগেছিল। এ নিয়ে কোচ বলেন, ‘আমরা ভালোই ডিফেন্স করেছি। কিছু সময় ঝুঁকি ছিল। আমরা এভাবেই খেলি। কেউ এটা পছন্দ করে, আবার কেউ করে না।’