নোবিপ্রবিতে গণঅভ্যুত্থান দিবসের আয়োজন নিয়ে বিতর্ক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

নোবিপ্রবি
  © সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার (৫ আগষ্ট) 'জাতীয় গণঅভ্যুত্থান দিবস' আয়োজনকে কেন্দ্র করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে নৈশভোজে গুটিকয়েক শিক্ষার্থীকে আমন্ত্রন জানানো এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযােগে এ বিতর্কের সূত্রপাত ঘটেছে। 

জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার নৈশভোজের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী ও নেতৃত্বদানকারী সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্মানে এ নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। কিন্তু রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাংলোয় অনুষ্ঠিতব্য এ ভোজে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী দাওয়াত না পাওয়ার অভিযোগে আমন্ত্রন পাওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই তা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা কর্তৃপক্ষের এমন আয়োজনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে এর প্রতিবাদ জানান।

এমনই একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমআইএস বিভাগের শিক্ষার্থী বনি ইয়ামিন লিখিতভাবে অভিযােগ করে আয়োজনের প্রতিবাদ করেন। অভিযোগে তিনি বলেন, “৫ আগস্ট উপলক্ষে এমন একটি আয়োজনের কথা আমিই প্রথম প্রশাসনকে প্রস্তাব করি। তখন হলের সকল শিক্ষার্থীদের জন্য ফিস্টের ব্যবস্থা করতে প্রস্তাব জানাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাজেট সংকটের কথা বলে তা এড়িয়ে যায়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথাকথিত কিছু সমন্বয়কারীর পরামর্শে সকল শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা না করে লাখ টাকার কনসার্ট আয়োজনের ব্যবস্থা করেছে। এটা সুস্পষ্ট বৈষম্য।”

লিখিত অভিযোগ পত্রে বনি আমিন আরও বলেন, “শহীদ পরিবার ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবহেলিত রেখে প্রশাসনের এই দ্বিমুখী আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। সকল শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার নিশ্চিত না হলে আমরা নৈশভোজের দাওয়াত গ্রহণ করব না।”

একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য মাহমুদুল হাসান আরিফও গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক আয়োজনকে ‘জুলাই শহীদদের আত্মার প্রতি অবমাননাকর’ হিসেবে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “যারা আমাদের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের স্মৃতির মাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা শহীদদের আত্মার সাথে বেঈমানির শামিল। এটি বিগত সময়ের কালচারাল ফ্যাসিজমেরই প্রতিচ্ছবি।”

তিনি ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটি’ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আমি আমার জায়গা থেকে এই প্রোগ্রাম বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সেই সাথে এই কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছি।”

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন কমিটির আরেক সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম হাসানও কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম স্বৈরাচারের বিদায় উপলক্ষে বিজয় কনসার্টের। কোন শহীদদের স্মরণে এটা আয়োজনের প্রস্তাব করা হয় নি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসবের কোনাে কর্ণপাত করেনি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনের এমন আচরনে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানান। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন আয়োজনের বিরোধিতা করেন।

নৈশভোজে আমন্ত্রণ পাওয়া এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেন, সাধারণ  শিক্ষার্থীদের জন্য ফিস্টের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আমন্ত্রণে যাবোনা।

জানতে চাইলে নোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেজুয়ানুল হক বলেন,  মূলত অর্থ সংকটের কারনে সবার জন্য নৈশ ভোজের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে ১২০/১৩০ টাকা করে নিয়ে সবাইকে এক সাথে নিয়ে আয়োজন করছে। তিনি আরও বলেন, হলের বিষয়ে আয়োজন করতে গেলে বাকিরা বঞ্চিত হবে। এই নিয়েও প্রশ্ন উঠবে। তাই হলের সবার জন্য আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) বর্তমানে প্রায় ৮ হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমানে পাঁচটি হল রয়েছে। এরমধ্যে ছেলেদের জন্য ২টি ও মেয়েদের জন্য ৩টি হল আছে।


মন্তব্য