যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি
দরকষাকষি করতে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন বাণিজ্য সচিব
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১০:৩০ AM , আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১০:৪২ AM

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রস্তাবিত শুল্ক চুক্তির খসড়া এখনও চূড়ান্ত হয়নি। একাধিক বিষয়ে মতপার্থক্য থাকায় আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। ফলে দর কষাকষি এবং আলোচনা আরও কিছু সময় চলবে।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর (ইউএসটিআর) এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। বৈঠকে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। অনলাইনে যুক্ত ছিলেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮ জুলাই ইউএসটিআরের সঙ্গে আবারও বৈঠক করবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। এ বৈঠকে অংশ নিতে শনিবার ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন বাণিজ্যসচিব। সফরকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করবেন।
সূত্র জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের সম্ভাব্য পথ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি একটি চুক্তির খসড়া প্রস্তাব দেয়। তবে এতে কিছু শর্ত রয়েছে, যা বাংলাদেশের মতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে ঢাকা এখন এমন একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চায়, যা প্রচলিত বিশ্ববাণিজ্যের নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং পারস্পরিক সুবিধাজনক।
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত প্রস্তাবিত খসড়ার ওপর তিন দফা মতামত পাঠিয়েছে এবং দুই পক্ষের মধ্যে তিনবার বৈঠক হয়েছে। তবু মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর শর্তের কারণেই এখনো চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত হয়নি।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে—তারা যদি অন্য কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা বাড়তি শুল্ক আরোপ করে, বাংলাদেশকেও তাতে সঙ্গ দিতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ বলেছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এমন কোনো শর্ত গ্রহণযোগ্য নয়, যা কোনো একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত অন্য দেশের ওপর চাপিয়ে দেয়।
আরও একটি শর্তে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্যে বাংলাদেশ শুল্ক ছাড় দেবে, সেসব পণ্যে অন্য কোনো দেশকে যেন একই সুবিধা না দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশ এটিকেও গ্রহণযোগ্য মনে করছে না, কারণ এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘সর্বাধিক অনুকূল রাষ্ট নীতির পরিপন্থী।
এই কঠিন শর্তগুলোর কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্য দেশগুলোও এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে এগোতে পারেনি।
সূত্র বলছে, ইন্দোনেশিয়া প্রাথমিকভাবে রাজি থাকলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন শর্ত মেনে চুক্তিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার সামাজিক মাধ্যমে জানান, ভিয়েতনামের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। সে অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে, আর ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে না।
প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ববাজারে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। এর আওতায় বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। তবে ৯ এপ্রিল তিন মাসের জন্য শুল্ক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প। সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৮ জুলাই। এর আগেই আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চায় ঢাকা।