এনবিআরে অদৃশ্য আতঙ্ক!

এনবিআর
  © ফাইল ছবি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) দেড় মাসের দীর্ঘ আন্দোলনের পর এবার শুরু হয়েছে বাধ্যতামূলক অবসর, বরখাস্ত, বদলি ও তদন্তের আশঙ্কা। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী আতঙ্কে নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছেন এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকেও সরে গেছেন। কর্মস্থলে উপস্থিত হলেও অনেকের মনোযোগ নেই স্বাভাবিক কার্যক্রমে।

গত রোববার রাতে আন্দোলন প্রত্যাহারের পর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্ভয়ে ও আতঙ্কহীনভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে—বাধ্যতামূলক অবসর, বরখাস্ত ও বদলির ঘটনা চলমান রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবারও এনবিআরের দুই কমিশনারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। এই পাঁচ কর্মকর্তা হলেন বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. কামারুজ্জামান, ঢাকা পূর্ব কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার কাজী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, আয়কর বিভাগের অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা, উপ-কর কমিশনার মো. মামুন মিয়া ও কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ।

গত পাঁচ দিনে সব মিলিয়ে এনবিআরের ২ জন সদস্যসহ ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। তাঁদের অধিকাংশই আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। আন্দোলন প্রত্যাহারের পর এ পর্যন্ত তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কাজ বন্ধ রাখার দায়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

রোববার রাতে আন্দোলন প্রত্যাহারের জন্য ব্যবসায়ী নেতারা সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন। সূত্রগুলো বলছে, আন্দোলন প্রত্যাহারের পর আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, এমন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ব্যবসায়ীরাও সেই আশ্বাসের কথা আন্দোলনকারীদের জানিয়েছিলেন। পরে ব্যবসায়ী নেতা ও আন্দোলনকারী এনবিআর কর্মকর্তাদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এনবিআরের আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী কর্মকর্তারা এখন মধ্যস্থতাকারী ব্যবসায়ী নেতাদের এসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করছেন। তাঁরা এ ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বন্ধে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন পর্যায়ের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর তালিকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বেশ কিছু কর্মকর্তাকে বদলির জন্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন, এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই প্রাথমিক তালিকায় আছেন বলে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানান।

রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে দেড় মাস ধরে আন্দোলন করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। গত শনি ও রোববার দুই দিন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে সারা দেশের রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অচল হয়ে যায়।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে সরকার উভয় সংকট অবস্থায়। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হতো, তাহলে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হতো যে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেও পার পাওয়া যায়। আবার যেহেতু একটি সমঝোতা হয়েছিল, তাই এত দ্রুত এ ধরনের শাস্তি না দিয়ে একটু রয়ে-সয়ে করা যেত। তাহলে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এখন যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল।


মন্তব্য