এক কোম্পানির ৭ গুণ মুনাফা বৃদ্ধি নিয়ে গুঞ্জন

শেয়ারবাজার
  © ফাইল ছবি

পুঁজিবাজারে নতুন জল্পনা তৈরি করেছে ফাইন ফুডস লিমিটেড। শেয়ারবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের তালিকাভুক্ত এই কোম্পানিটির মুনাফা হঠাৎ করে সাত গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪ টাকা ১২ পয়সা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ৫৭ পয়সা। ইপিএসে আকস্মিক ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধি গত এক দশকে দেখা যায়নি, ফলে অনেকেই বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন।

বিগত বছরগুলোতে কোম্পানিটির ইপিএস খুবই কম ছিল এবং ডিভিডেন্ডও ছিল নগণ্য। অথচ ২০২৪ সালে কোম্পানিটি হঠাৎ ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে, যদিও সেটি শুধুমাত্র সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। একই সময়ে দেখা যায়, উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিত শেয়ার ধারণ ৩০ শতাংশের নিচে রয়ে যায়, যা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নিয়ম অনুযায়ী অগ্রহণযোগ্য।

জানা গেছে, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত হয়েছেন বিতর্কিত দুই ব্যক্তি—বিশ্বজিৎ দাশ ও সুজিত সাহা। বিশ্বজিৎ দাশ শেয়ারবাজারে একাধিক কারসাজির অভিযোগে আলোচিত, আর সুজিত সাহা মাত্র ২০৬টি শেয়ারের মালিক হয়েও এক সময় কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন এবং বর্তমানে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিনিয়োগকারীরা প্রশ্ন তুলেছেন, যাদের শেয়ারহোল্ডিং নেই বললেই চলে, তারা কীভাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসীন হন।

বর্তমানে ফাইন ফুডসের মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ৩৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৮টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ১৫.২৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৭.৩১ শতাংশ এবং বাকি ৫৭.৪৪ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার ধারণ ৩০ শতাংশের নিচে থাকলেও তারা বারবার এই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ বিএসইসি এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে বাজর সংশ্লিষ্টদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।

২০২৪ অর্থবছর শেষে (৩০ জুন পর্যন্ত) কোম্পানিটির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৮৮ পয়সা, যেখানে আগের বছর তা ছিল মাত্র ৭ পয়সা। এই সময়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগের বছর ২০২৩ সালে কোম্পানিটি দিয়েছে ১.২৫ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ১.৫০ শতাংশ ডিভিডেন্ড। ২০২১ সালে কোনো ডিভিডেন্ড দেওয়া হয়নি; সেই বছর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ১১ পয়সা লোকসান ছিল।

বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ফাইন ফুডসের ইপিএসে হঠাৎ করে এমন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি কোনো স্বাভাবিক ব্যবসায়িক সাফল্যের ফল নয়। তাদের মতে, এই মুনাফা ও ডিভিডেন্ড বৃদ্ধির পেছনে প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। একইসঙ্গে বিতর্কিত ব্যক্তিদের পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও তদন্তের আওতায় আনা উচিত। তারা আরও বলেন, কোম্পানির আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং শেয়ার কারসাজি অভিযোগের নিরপেক্ষ যাচাইয়ে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।


মন্তব্য