শেয়ারবাজারে বিদেশিদের আগ্রহের শীর্ষে ৫ কোম্পানি

শেয়ারবাজার
  © ফাইল ছবি

গত জুলাই মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। এর মধ্যে শীর্ষে ছিল ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যে দেখা যায়, ওই মাসে নিট বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। মোট ১৪৫টি কোম্পানিতে বিদেশি বিনিয়োগ থাকলেও এর মধ্যে ২৪টিতে বেড়েছে এবং ২৭টিতে কমেছে।

বিদেশিরা সবচেয়ে বেশি শেয়ার কিনেছেন প্রাইম ব্যাংকের। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ম্যারিকো ও উত্তরা ব্যাংক। ব্র্যাক ব্যাংকে ২৩৩ কোটি টাকা, প্রাইম ব্যাংকে ৭৮ কোটি টাকা, আইডিএলসি ফাইন্যান্সে ১৯ কোটি টাকা, ম্যারিকোতে ১১ কোটি টাকা এবং উত্তরা ব্যাংকে ৩.৯২ কোটি টাকার শেয়ার কেনা হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সাধারণত শক্তিশালী ব্যবসায়িক সম্ভাবনা এবং সুশাসনসম্পন্ন কোম্পানিকে পছন্দ করেন। তবে দেশের বাজারে ‘জাঙ্ক স্টক’ বেশি থাকায় বিনিয়োগ তাদের হাতে গোনা কিছু কোম্পানিতে সীমাবদ্ধ থাকে। এছাড়া সামষ্টিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, দুর্বল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিদেশি বিনিয়োগকে প্রভাবিত করতে পারে।

মার্কেট সূচক সরবরাহকারী এমএসসিআই জানিয়েছে, জুন ২০২৫ পর্যালোচনায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফ্লোর প্রাইস তুলে নিলেও দুটি কোম্পানির শেয়ারে তা এখনও রয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার স্বল্পতার কারণে বিনিয়োগকারীরা মূলধন ফেরত পেতে বিলম্বের মুখোমুখি হচ্ছেন। এমএসসিআই ‘বিশেষ ব্যবস্থা’ অব্যাহত রাখবে, যা সূচকে সম্ভাব্য পরিবর্তন কমাবে। একইভাবে, এফটিএসই রাসেল গত বছরের সেপ্টেম্বরে পর্যালোচনায় জানিয়েছে যে দুটি কোম্পানি ছাড়া সব শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ায় তারা অন্যান্য বাংলাদেশি সিকিউরিটিজের যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করবে।

গত ১৩ আগস্ট ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ আয়োজিত ‘ফরেন ইনভেস্টরস সামিট ২০২৫’-এ প্রধান উপদেষ্টা অর্থনৈতিক বিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তন সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকটে পড়েনি। তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক স্টক মার্কেটের উত্থানের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে, যা আমাদের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রমাণ। এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের ভালো সময়। আমাদের শেয়ারবাজার দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত।’

কনটেক্সিওয়েল এনভেস্টমেন্ট এলএলসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক টাকাও হিরোসে বলেন, দীর্ঘমেয়াদী বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ অপরিহার্য। তিনি আরও বলেন, “আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব এবং আক্রমণাত্মক বিনিয়োগ করি, তবে অস্থিরতায় সহনশীল নই। যদি পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়, আমরা আমাদের মূলধন ফিরিয়ে নেব। অনুগ্রহ করে কোনো সহিংসতা করবেন না; আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে।”

এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের ফান্ড ম্যানেজার রুচির দেশাই উল্লেখ করেছেন, দেশের রাজনৈতিক ও নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা গেলে আগামী পাঁচ-ছয় বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পথে কোনো বাধা থাকবে না। তিনি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে বলেন, “দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, “আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। বর্তমানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারের দৈনন্দিন কার্যক্রমে আর হস্তক্ষেপ করে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারগুলোও করা হয়েছে।”


মন্তব্য