মুখ থুবড়ে পড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০১:৩৮ PM , আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০১:৩৮ PM
-11741.jpg)
দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত প্রতিনিয়ত কমছে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে গ্যাসের প্রাপ্যতা কমেছে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও উদ্বিগ্ন করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গ্যাসের ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি আনতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও সময় প্রয়োজন।
তাদের মতে, আগের সরকার দেশীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের পরিবর্তে আমদানির ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। ফলে এখন গ্যাস খাতে ধস নামলেও তা মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
পেট্রোবাংলা বলছে, চলতি বছরে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৫ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। অথচ গত ১৩ আগস্ট পর্যন্ত তারা সরবরাহ করতে পেরেছে (এলএনজিসহ) ২ হাজার ৮৩২ মিলিয়ন ঘনফুট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্যাস খাত নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে দেশ বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
পেট্রোবাংলার তথ্য বলছে, দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বেসরকারি মালিকানাধীন মোট ২২টি গ্যাসফিল্ড থেকে চলতি বছর গড়ে উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। যেখানে গত বছর একই সময়ে উৎপাদিত হয়েছে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বৃহৎ গ্যাসফিল্ড হিসেবে পরিচিত তিতাসের ২৬টি গ্যাসকূপ থেকে এ বছর উৎপাদন হচ্ছে ৩১৯ মিলিয়ন ঘনফুট, গত বছর যেখানে উৎপাদিত হয়েছে ৩৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বছরের ব্যবধানে হবিগঞ্জ গ্যাসফিল্ডের উৎপাদন ১১৬ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে নেমে এসেছে ৯০ মিলিয়ন ঘনফুটে। রশীদপুর গ্যাসফিল্ডের উৎপাদনও ৬৯ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে নেমে এসেছে ৬১ মিলিয়ন ঘনফুটে। তবে কিছু গ্যাসকূপের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হলেও তা যথেষ্ট নয়।
অন্যদিকে, শেভরনের মালিকানাধীন দেশের বৃহৎ গ্যাসফিল্ড বিবিয়ানার উৎপাদনও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। গত বছর গড়ে এই ফিল্ড থেকে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত হলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটে। এ ছাড়া জালালাবাদ গ্যাসফিল্ডের উৎপাদন কমে ১৫২ মিলিয়ন ঘনফুট থেকে ১৩৭ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে।
বছরের ব্যবধানে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এলএনজি আমদানির মাধ্যমে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে। দেশে বর্তমানে এলএনজি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গত বছর এই সক্ষমতায় ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়। তবে চলতি বছর তা বাড়িয়ে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হচ্ছে। অর্থাৎ গ্যাসের চাহিদার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মেটানো হচ্ছে আমদানির মাধ্যমে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে ধারাবাহিকভাবে গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় তা সামাল দিতে গিয়ে মজুত কমছে। মজুত কমে যাওয়ায় উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। সে কারণে চাহিদামাফিক গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় গ্যাসকূপের মুখে কম্প্রেসার বসিয়ে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সরকারের উচিত ছিল গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নজর দেওয়া। কিন্তু তা না করে তারা আমদানিতে নজর দিয়েছে। বর্তমানে ১১০০ মিলিয়ন এলএনজির সক্ষমতা থাকলেও সেটি আরও বাড়াতে আওয়ামী লীগ সরকার মহেশখালীতে তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, পায়রাতে ভাসমান টার্মিনাল স্থাপন, সাতক্ষীরার ভোমরা-খুলনা গ্যাস সরবরাহ পাইপলাইন, বেনাপোল-খুলনা পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে গ্যাস আমদানি, ভোলা-বরিশাল-খুলনা পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছিল।
বিশেষ বিধানের আওতায় সেসময় সামিট গ্রুপের সঙ্গে মহেশখালীতে ভাড়াভিত্তিক ভাসমান এলএনজি স্থাপনে চুক্তি স্বাক্ষর ও পায়রাতে ভাসমান টার্মিনালের জন্য মার্কিন প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত ধাপে ছিল। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসে বিশেষ বিধান আইন বাতিল করে এসব প্রকল্প বন্ধ করে দেয়।
এসবের মধ্যে দেশের গ্যাস পরিস্থিতির সহসাই কোনো উন্নতি সম্ভব হচ্ছে না। কারণ কোনো গ্যাসকূপ আবিষ্কার থেকে শুরু করে তা উৎপাদনে আনতে ৩ বছর সময় লাগে। আবার একটি ল্যান্ডবেইজ এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনেও সময় লাগে প্রায় ৭ মাস। অন্যদিকে, বিবিয়ানাসহ বড় গ্যাসফিল্ডের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। এ অবস্থায় কোনো কারণে কূপগুলোর উৎপাদনে বড় রকমের ধস দেখা দিলে দেশের গ্যাস পরিস্থিতি বড় বিপর্যয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।