এলডিসি থেকে দ্রুত উত্তোরণ চান না ব্যবসায়ীরা

এলডিসি
  © ফাইল ছবি

দেশের ১৬টি ব্যবসায়ী সংগঠন স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ থেকে উত্তরণের সময়সীমা ৩ থেকে ৫ বছর পিছিয়ে দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন: চ্যালেঞ্জেস অ্যাহেড’ শীর্ষক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য প্রদান ও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আইসিসিবির সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা এলডিসি থেকে উত্তরণকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। আমাদের আলোচনার বিষয় এটা নয় যে, “আমাদের উত্তরণ হবে কি না” বরং আলোচনা এটা, কীভাবে আমাদের উত্তরণ হবে। সফল ও টেকসই উত্তরণের জন্য তিন থেকে পাঁচ বছরের বাড়তি সময় প্রয়োজন। আমরা জোর দিয়ে বলছি, তিন থেকে পাঁচ বছরের একটি বাড়তি সময় পাওয়া জরুরি।’

মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক—দুই দফা পর্যালোচনায় জাতিসংঘের এই তিনটি মানদণ্ড পূরণ করায় বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে। ব্যবসায়ী নেতাদের মতে, এই অর্জন জাতির জন্য গর্বের হলেও সঠিকভাবে মোকাবিলা না করলে তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বয়ে আনতে পারে।

মাহবুবুর রহমান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ দেশের জন্য একটি বড় অর্জন হলেও এর সঙ্গে বেশ কিছু ঝুঁকি ও দায়িত্ব জড়িয়ে আছে। ২০২৬ সালের নভেম্বরে উত্তরণের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের মতো প্রধান বাজারগুলোতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল হতে পারে, যার ফলে রপ্তানি ৬ থেকে ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) অধীনে প্রাপ্ত বিশেষ সুবিধা, যেমন রপ্তানিতে ভর্তুকি এবং মেধাস্বত্ব চুক্তি বাস্তবায়নে শিথিলতা পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া, সহজ শর্তের বদলে বাংলাদেশকে বাজারভিত্তিক হারে ঋণ নিতে হবে, যা ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়াবে।

দেশের ওষুধ ও তৈরি পোশাকশিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের ওষুধশিল্প বর্তমানে স্থানীয় চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করে এবং ১৫০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করে। মেধাস্বত্ব চুক্তিতে ছাড় পাওয়ার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এলডিসি উত্তরণের পর এ সুরক্ষা উঠে গেলে ক্যানসার ও এইচআইভির মতো জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদুল হাসান খান বলেন, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশের বেশি জোগান দেওয়া তৈরি পোশাক খাতকেও কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং কঠোর কমপ্লায়েন্স আইন এ খাতকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

পরে এক প্রশ্নের উত্তরে মাহবুবুর রহমান দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটগুলো তুলে ধরে বলেন, এ পরিস্থিতিতে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা আরও কঠিন হবে। বিভিন্ন দেশ প্রস্তুতির জন্য এলডিসি উত্তরণ বিলম্বিত করেছে। মালদ্বীপ ৮ বছর, ভানুয়াতু ২০ বছর এবং নেপাল ৫ বছর সময় নিয়েছে। মিয়ানমার ও তিমুর-লেস্তে যোগ্যতা অর্জন করলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তাদের উত্তরণ স্থগিত রাখা হয়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে আইসিসিবির সহসভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘উত্তরণ নিশ্চিত; কিন্তু সাফল্য নিশ্চিত নয়। সাফল্য নির্ভর করবে আমরা কত দ্রুত ও সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ নিতে পারি, তার ওপর।’


মন্তব্য