জনতা ব্যাংক কর্মকর্তাদের কেন শাস্তির নির্দেশ দিল আদালত?
- বাংলাকন্ঠ রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৪ AM , আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৪ AM
জনতা ব্যাংক থেকে হানজালা টেক্সটাইল পার্ক লিমিটেডের নেওয়া ১৫৬ কোটি টাকার ঋণ দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি অবস্থায় রয়েছে। দুই দফা পুনঃতফসিল করার পরও প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত ডাউনপেমেন্ট জমা দেয়নি। গত ১১ বছরে সুদসহ হিসাব অনুযায়ী, ঋণের মাত্র দুই শতাংশেরও কম পরিশোধ করেছে তারা।
খেলাপি ঋণ আদায়ে যথাসময়ে আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবার ঢাকার অর্থঋণ আদালত-৫ এর বিচারক মুজাহিদুর রহমান জনতা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঋণ আদায়ে যথাসময়ে আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ায় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের অবহেলার কারণে অর্থঋণ আদালত আইনের ৪৬ ধারায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা দায়ের হয়নি এবং ঋণের মেয়াদ বাড়ানোর পরও বিবাদীরা পরিশোধযোগ্য সুদ ও মূলধনের মাত্র দুই শতাংশ পরিশোধ করেননি। তাই দায়িত্বে অবহেলার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলানুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেওয়া এবং দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি বিষয়ে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে আদালত ও সরকারকে অবহিত করতে হবে। আদেশ কার্যকর করার জন্য এর কপি জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠানো হবে। জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবর রহমান জানান, আদালতের আদেশের কপি এখনও হাতে পাননি; হাতে পাওয়ার পর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের হানজালা টেক্সটাইল পার্ক লিমিটেডকে ২০১৪ সালে প্রকল্প ঋণ দেয় জনতা ব্যাংকের জনতা ভবন করপোরেট শাখা। শুরুতে আট বছরের জন্য প্রকল্প ঋণ হিসেবে ৪৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে আরও সাড়ে ৩ কোটি টাকার চলতি মূলধন ঋণ এবং ২০ লাখ ডলারের এলসি সীমা অনুমোদন করা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে ঋণের কোনো কিস্তি দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এলসির দায়ও পরিশোধ না করায় ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটির নামে ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার নতুন ফোর্স ঋণ সৃষ্টি করে ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার ফরিদুল আকবর। তাঁর স্ত্রী আরিফা আকবর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ঋণ নেওয়ার পর থেকে গত ১১ বছরে গ্রাহক মাত্র ১ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। মঞ্জুরিপত্রের শর্ত মেনে ঋণ পরিশোধ না করায় সম্পূর্ণ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয় ২০১৯ সালে। ওই বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেওয়া বিশেষ বিবেচনায় ঋণটি পুনঃতপশিল করা হয়। গ্রেস পিরিয়ড বা কিস্তি জমার তারিখ শেষ হওয়ার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে আবারও ঋণটি পুনঃতপশিল করে ব্যাংক। এ দফায় আরও তিন বছর সময় বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফা ঋণ পুনঃতপশিলের জন্য ডাউন পেমেন্টের শর্ত পরিপালন করেনি গ্রাহক। আট বছর মেয়াদে দেওয়া ঋণের মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানোর পরও বিবাদীরা ব্যাংকের পাওনার ২ শতাংশ টাকাও পরিশোধ করেনি। এভাবে সময় পাওয়ার পরও বিবাদীরা টাকা পরিশোধ না করলেও জনতা ব্যাংক বিবাদীদের বিরুদ্ধে খেলাপি ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এসে।
অর্থঋণ আদালত আইনের ৪৬ ধারার নিয়ম অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ আদায় না হলে পরবর্তী এক বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে। এতদিনেও মামলা না হওয়ায় দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া খেলাপি ঋণ আদায় আরও কার্যকর করার জন্য বন্ধকি সম্পত্তিগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে হালনাগাদ মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে এবং প্রতিটি বন্ধকি সম্পত্তির দৃশ্যমান স্থানে চারটি সাইনবোর্ড স্থাপন করে স্থিরচিত্র আদালতে জমা দিতে হবে।