নিজ দেশেই বিপদে বাংলাভাষীরা

ভারত
  © ফাইল ছবি

ভারতে, বিশেষ করে হরিয়ানার কিছু অঞ্চলে বাংলাভাষী নাগরিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে অস্থায়ী শিবিরে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বাংলাভাষী মুসলিমদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেখাতে না পারার অজুহাতে বহু বাংলাভাষীকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেকেই দীর্ঘ প্রজন্ম ধরে ভারতে বসবাস করলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে আটক হচ্ছেন। এমনকি কেউ কেউ বৈধ কাগজ দেখালেও শুধুমাত্র মুসলমান ও বাংলাভাষী হওয়ার কারণে তাঁদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের রাখা হচ্ছে অস্থায়ী বন্দিশিবিরে, যা তাঁদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল বলেই মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।

তাদেরই একজন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বাসিন্দা পাথর আলি শেখ। তিনি অনেক বছর ধরেই গুরুগ্রামে ভাঙ্গারির কাজ করেন।

তিনি বলেন, হঠাৎ একটা পুলিশের গাড়ি থেকে আমাকে ডাকল, কাগজপত্র কী আছে দেখতে চাইল। আমরা তো নোংরা ঘাঁটাঘাঁটি করি, আধার, ভোটার কার্ডের মতো মূল্যবান জিনিষ কি আর সঙ্গে থাকে! আমরা তো ফোনও রাখি না কাজের সময়ে। কাগজ দেখাতে পারিনি বলে পুলিশের সাহেব আমাকে বলল গাড়িতে বস। আমরা বললাম কেন স্যার গাড়িতে বসতে বলছেন? তো বলে থানায় চল, কাজ আছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের নিয়ে গেল সেক্টর ৪৩ থানায়। সেখানে আমার মতো ১০ জনকে এনেছিল। আমাদের বলল পরিচয় যাচাই করা হবে আমাদের দেশ-বাড়ি যে থানায়, সেখান থেকে। সব নাম ঠিকানা নিয়ে রাতে আবার চালান করে দিল সেক্টর ১০এ-তে। একটা কমিনিউটি হলে রাখা হলো। সেখানে প্রচুর মানুষ, সবাইকে একইভাবে ধরে এনেছে।

আলি শেখ বলেন, আমরা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ছিলাম আর আসামের লোকও ছিল। সবাই বাঙালি। অনেক লোক গাড়িতে করে নিয়ে আসছিল পুলিশ। দেখে তো খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম যে বাঙালিদের এভাবে কেন অ্যারেস্ট করছে! আমরা মোট ৭৪ জন ছিলাম। দুই বেলা ভাত তরকারি খেতে দিত।

আলি শেখের বাড়ি নদীয়া জেলার যে এলাকায়, সেই নবদ্বীপ থানার ওসি তার সব পরিচয়পত্র যাচাই করে একটি চিঠি গুরুগ্রাম পুলিশের কাছে পাঠানোর পরে বুধবার দিবাগত রাত একটা নাগাদ পাথর আলি শেখ ছাড়া পেয়েছেন। তার প্রশ্ন, আমি তো ভারতীয়। সব কাগজ তো দেখিয়েছিলাম। তবুও আমাকে চারদিন আটকিয়ে রাখল!

তার সঙ্গে মোট ২৬ জনকে ছাড়া হয়েছে, তবে এখনো কয়েকজন সেখানে আটক আছেন বলে বুধবার দুপুরে জানিয়েছেন পাথর আলি শেখ।

এদিকে পরিচয়পত্রের নথি যাচাইয়ের জন্য এভাবে কাউকে আটকিয়ে রাখা বেআইনি বলে জানাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুপান্থ সিনহা। তিনি বলেন, খুবই অমানবিক, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তিন-চারদিন ধরে আটক রাখা হয়েছে এদের। পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হচ্ছে না।

অন্যদিকে আটক রাখার কথা গুরুগ্রাম পুলিশ অস্বীকার করেনি। গুরুগ্রাম পুলিশের জনসংযোগ অফিসার সন্দীপ তুরান বলেন, ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ হওয়ার পরও কাউকে আটক করে রাখা হয়েছে, এ রকম তথ্য আমার কাছে নেই। যদি আপনাদের কাছে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য থাকে যে পরিচয়পত্র যাচাই করে ভারতের নাগরিকত্বের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তবু আটকে রাখা হয়েছে, তাহলে আমাদের জানান।

প্রসঙ্গত, রাজস্থান, গুজরাত, ছত্তিশগড়, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও ওড়িশায় অবৈধ বাংলাদেশি চিহ্নিত করতে গিয়ে ভারতের বাংলাভাষীদেরও আটক করা হচ্ছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই মুসলমান, তবে হিন্দুদেরও আটক করা হচ্ছে। আবার এ রকম ঘটনাও সামনে এসেছে যে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও তাকে বাংলাদেশে পুশ আউট করে দেওয়া হয়েছে।


মন্তব্য