আক্ষেপের আগুনে পুড়ছে ভারত

রপ্তানী শুল্ক
  © সংগৃহীত

মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোষাক শিল্পের রপ্তানীতে শুল্ক সুবিধা পাওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভারতের শেয়ার বাজারে। শুধু নেতিবাচক প্রভাব বললে ভুল হবে, দেশটির শেয়ার বাজারে রীতিমত ধ্বস নেমেছে। বৃস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ সংক্রান্ত ঘোষণার পর আজ শুক্রবার ভারতের একাধিক টেক্সটাইল কোম্পানির শেয়ারে ৭ শতাংশ পর্যন্ত পতন হয়েছে। এ খবর দিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমস। 

গতকাল বৃহস্পতিবার এক নির্বাহী আদেশে বিভিন্ন দেশ থেকেআমেরিকায় আমদানি করা পণ্যে নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরমধ্যে বাংলাদেশের পণ্যে পারস্পরিক শুল্ক ৩৫ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে দেশটি। অপরদিকে ভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যা আগামী ৭ আগস্ট থেকে তা কার্যকর হবে। ট্রাম্পের এ ঘোষণার পরই আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) ভারতের পোশাক বাজারের শেয়ারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। 

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। ভারত দীর্ঘদিন ধরেই এ বাজারটি ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু প্রযুক্তি ও শ্রমের সহজলভ্যতার কারণে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। তবে গত মাসে যখন বাংলাদেশের ওপর ট্রাম্প ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন তখন ভারতের বাজার বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে যায়। ওই সময় দেশটির পোশাকের বাজারের শেয়ারের দামও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু নতুন শুল্ক ঘোষণার পর পাল্টে যেতে থাকে চিত্র।

বাংলাদেশের ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরই ভারতের কেপিআর মিলসের শেয়ার ৫ শতাংশ, ওয়েলসপুন লিভিংয়ের শেয়ার ২ শতাংশ, অলোক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার ০ দশমিক ৮ শতাংশ, পিয়ার্ল গ্লোবালের শেয়ার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, গোকূলদাস এক্সপোর্টের শেয়ার ২ দশমিক ৬ শতাংশ, কিটেক্স গার্মেন্টসের শেয়ার ৩ দশমিক ২১ শতাংশ এবং বর্ধমান টেক্সটাইলের শেয়ার ২ দশমিক ৮ শতাংশ কমে যায়।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তান বাণিজ্য চুক্তি করেছে। এরফলে দেশটির পণ্যে ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে দেশটি। যেখানে গত এপ্রিলে আরোপ করা হয়েছিল ২৯ শতাংশ শুল্ক। এ ছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথভাবে তেল অন্বেষণেও চুক্তিবদ্ধ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কারণে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে টেক্সটাইল এবং উচ্চ-মূল্যের ইলেকট্রনিক্সের মতো শ্রম-নিবিড় খাতে, যা ভারতের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে মূল্য প্রতিযোগিতা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব ভারতীয় কোম্পানি তাদের রাজস্বের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আয় করে, তারা এখন বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। বাংলাদেশের নতুন শুল্ক হার এখন ভিয়েতনামের সমান- মাত্র ২০ শতাংশ। যেখানে ভারতীয় রপ্তানিপণ্য এখনো ২৫ শতাংশ শুল্কের মুখে।

শেয়ারবাজারে এই পতনের ফলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের মুনাফা মার্জিন আরও সংকুচিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রমুখী রপ্তানিতে অতিরিক্ত ৭ থেকে ১০ শতাংশ খরচের বোঝা তাদের প্রতিযোগিতা ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে। রত্ন, টেক্সটাইল ও অটো পার্টস- এই তিন খাতই এখন একসঙ্গে ঝুঁকিতে পড়েছে। আগেই যেখানে মার্জিন সীমিত ছিল, এখন সেখানে অতিরিক্ত খরচ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দেবে ভারতীয় কোম্পানিগুলোকে। চয়েস ওয়েলথ এর এভিপি অক্ষত গার্গ এ মন্তব্য করেছেন।

এই শুল্ক পরিবর্তনের ফলে বাজারে আরও অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বর্তমানে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো নতুন বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা করছে না, যার ফলে এ ধরনের শুল্ক বিভাজনের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।


মন্তব্য