ভারতের উপর ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কের শাস্তিতে বাংলাদেশের পোয়াবারো

শুল্কারোপ
  © সংগৃহীত

ভারতের ওপর আবারো শুল্কের খড়গ চাপালো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি রাশিয়া থেকে তলে কেনায় শাস্তি হিসেবে ভারতের ওপর নতুন করে আবার ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে। স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে ভারতের পণ্যে অতিরিক্ত আরও ২৫ ভাগ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে মোট শুল্কের হার দাঁড়াবে ৫০ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ভারতের উপর আরোপিত অন্যতম সর্বোচ্চ হার এটি। বলা হচ্ছে ভারতের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এটা এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় শাস্তিমূলক পদক্ষেপ। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি অনলাইনএ খবর দিয়েছে। 

এ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বড় দেশ ভারত মার্কিন শুল্কারোপের খড়গে যেন গোদের ওপর বিষফোঁড়া অবস্থায় রয়েছে। 

ভারতের উপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাস্তিমুল এ শুল্কারোপের ফলে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির সুযোগ বাড়তে পারে। কারণ ৫০ শতাংশ শুল্কারোপের ফলে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য রপ্তানিতে বড় ধরনের হোঁচট খাবে। এর সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ মোটাদাগে লাভবান হবে। 

ভারতের উপর এই নতুন শুল্ক কার্যকর হবে ২১ দিনের মধ্যে, অর্থাৎ ২৭ আগস্ট থেকে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানোয় এই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, রাশিয়া থেকে আমদানির বিষয়ে ভারতের অবস্থান আগেই স্পষ্ট করা হয়েছে। এই শুল্ক আরোপ সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অন্যায্য এবং অনুচিত। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশ্বের অনেক দেশই নিজেদের স্বার্থে এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাই শুধু ভারতকে লক্ষ্যবস্তু করা দুর্ভাগ্যজনক। ভারত তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।

এর আগেই ট্রাম্প হুমকি দেন, রুশ তেল কেনা বন্ধ না করলে ভারতকে চড়া মাশুল দিতে হবে। তিনি বলেন, ভারত তোয়াক্কাই করছে না রুশ যুদ্ধযন্ত্রের হাতে কত মানুষ মরছে ইউক্রেনে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণবীর জয়সওয়াল জানান, যুদ্ধের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রই ভারতকে উৎসাহ দিয়েছিল রুশ তেল আমদানিতে, যাতে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার স্থিতিশীল থাকে। এখন তারা কেন শাস্তি দিচ্ছে?

তিনি আরও বলেন, রাশিয়া থেকে আমদানি শুরু করতে হয়েছে। কারণ ওই সময় আমাদের ঐতিহ্যগত জ্বালানি সরবরাহ ইউরোপের দিকে মোড় নেয়। যদিও ট্রাম্প ও মোদি অতীতে একে অপরকে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করেছেন এবং একে অপরের দেশে রাজনৈতিক সমাবেশে অংশ নিয়েছেন, তবু এই সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করছে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির স্বার্থের বিচ্যুতি ঘটেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই শুল্ক নীতি শুধু ভারতের জন্য নয়, বরং চীন, তুরস্ক ও অন্যান্য রাশিয়া-সংশ্লিষ্ট ক্রেতাদের জন্যও সতর্ক সংকেত।

দিল্লিভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ  বলেছে, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রপ্তানি ৪০-৫০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। সংস্থাটির সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, ভারতের উচিত এখনই পাল্টা ব্যবস্থা না নেয়া। অন্তত ছয় মাস সংযত থাকা উচিত। ভয়ভীতির আবহে কোনো অর্থপূর্ণ বাণিজ্য আলোচনা সম্ভব নয়।


মন্তব্য