ভারত-চীনের বরফ গলতে শুরু করেছে?
- আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৬ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৩৮ PM , আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৩৮ PM

দীর্ঘদিন ধরেই চীনবিরোধী মতবাদ প্রচার করে বেড়াচ্ছে প্রতিবেশি দেশ ভারত। তবে এবার দেশ দুটির মধ্যে শীতল বরফ গলতে শুরু করেছে! চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই আগামী ১৮ আগস্ট ভারত সফরে আসছেন। তিন বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটিই তাঁর প্রথম নয়া দিল্লি সফর। ভারত সরকারের আমন্ত্রণে তিনি আগামী ১৮ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত নয়া দিল্লিতে অবস্থান করবেন।
আজ শনিবার (১৬ আগস্ট) চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ওয়াং ই’র এ সফরে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণম জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে অচলাবস্থা চলছে, সেই প্রেক্ষাপটে এই সফরকে কূটনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ওয়াং ই এবার অংশ নেবেন চীন-ভারতের সীমান্ত ইস্যুতে বিশেষ প্রতিনিধি পর্যায়ের ২৪ তম বৈঠকে। উল্লেখ্যে, ২০২০ সালে সীমান্তে ভারত ও চীনা সেনাদের সংঘর্ষে প্রাণহানির পর থেকে এত দিনে দ্বিতীয়বার এ ধরনের বৈঠক হতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৈঠক দুই দেশের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে পারে।
এর আগে, ২০২০ সালে হিমালয় অঞ্চলের গালওয়ানে সেই সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্ক একেবারেই তলানিতে ঠেকে। টানা পাঁচ বছর ধরে চলা অচলাবস্থা বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও বিমান চলাচলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। তবে গত বছরের অক্টোবরে সীমান্তে যৌথ টহল নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছায় দিল্লি ও বেইজিং। এরপর থেকে সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি মাসের শেষে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চীন সফরে যাচ্ছেন। ৭ বছরের মধ্যে এটাই হবে তাঁর প্রথম চীন সফর। সফরে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওয়াং ই’র দিল্লি সফরকে মোদি-সি বৈঠকের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
দুই দেশ সীমান্ত বাণিজ্য পুনরায় চালুর বিষয়ে আলোচনা করছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নির্ধারিত বাণিজ্যপথগুলো—উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ পাস, হিমাচল প্রদেশের শিপকি লা পাস এবং সিকিমের নাথু লা পাস—পুনরায় চালুর ব্যাপারে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি আগামী মাস থেকেই ভারত-চীনের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেইজিং বৃহত্তর স্বার্থে পার্থক্যগুলোকে সঠিকভাবে সামাল দিতে ভারতের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত। দুই দেশই বড় উদীয়মান অর্থনীতি এবং গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সম্পর্ক জোরদার করা সময়ের দাবি।
কূটনৈতিক মহলের মতে, ওয়াং ই’র এ সফর শুধু সীমান্ত ইস্যু নয়, বরং সামগ্রিকভাবে ভারত-চীন সম্পর্কের বরফ গলানো এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার পথ তৈরি করার দিকেই ইঙ্গিত করছে।
সূত্র: ব্লুমবার্গ ও দ্য হিন্দু