আমি নিঃশ্বাস নিতে চাই, বিক্ষোভে দিল্লিবাসী

দিল্লি
  © এএফপি

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি আবারও ঘন ধোঁয়াশার চাদরে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। তীব্র দুর্গন্ধময় ও দূষিত বাতাসে শ্বাসকষ্টের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য সংকটকে আরও গভীর করেছে। পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ নাগরিকরা সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।

সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে নয়াদিল্লির বায়ুমান সূচক (একিউআই) রেকর্ড করা হয় ৩৪৪, যা “অত্যন্ত বিপজ্জনক” পর্যায়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী, এ মাত্রার দূষণ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

এর আগের দিন, রোববার দূষণবিরোধী পদক্ষেপের দাবিতে দিল্লির নাগরিকরা রাস্তায় নেমে আসেন। দিল্লি গেট এলাকায় আয়োজিত বিক্ষোভে শিশু থেকে বয়স্ক—সকল বয়সের মানুষ অংশ নেয়। অনেকে মুখে মাস্ক পরে হাতে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদ জানায়। এক শিশুর পোস্টারে লেখা ছিল— “আমি নিঃশ্বাস নিতে চাই।”

প্রায় তিন কোটি মানুষের বসবাস নয়াদিল্লিতে, যা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানীগুলোর একটি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। প্রতি শীতেই শহরটি ঘন ধোঁয়াশায় ঢেকে যায়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাতাস ভারী হয়ে দূষণ স্তরে জমে থাকে— কৃষিজমির আগুন, শিল্পের নির্গমন ও যানবাহনের ধোঁয়ার মিশ্রণে তৈরি হয় এক প্রাণঘাতী পরিবেশ।

শহরটিতে বায়ুদূষণের সবচেয়ে ভয়াবহ উপাদান পিএম২.৫ (অতি সূক্ষ্ম কণিকা, যা রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করতে পারে)–এর মাত্রা নিয়মিতই জাতিসংঘের নির্ধারিত সীমার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি হয়ে যায়।

প্রতিবাদে অংশ নেওয়া এক নারী বলেন, “আজ আমি এখানে একজন মা হিসেবে এসেছি। আমি চাই না, আমার সন্তানদের নিয়ে আমাকে জলবায়ু শরণার্থী হতে হোক।”

দিল্লি গেটের আশপাশে, যেখানে বিক্ষোভ হয়, সেখানে পিএম২.৫–এর মাত্রা ডব্লিউএইচওর নির্ধারিত দৈনিক সীমার চেয়ে ১৩ গুণ বেশি রেকর্ড করা হয়।

আরেক অংশগ্রহণকারী আইনজীবী তানভি কুসুম বলেন, “প্রতি বছর একই গল্প, কিন্তু কোনো সমাধান হয় না। আমরা চাপ সৃষ্টি না করলে সরকার বিষয়টি গুরুত্বই দেয় না।”

সীমিত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, জল ছিটানো ট্রাক দিয়ে ধুলো দমন— এসব সরকারি পদক্ষেপগুলো অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

আমি দিল্লির হয়ে কথা বলছি দাবি করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিক্ষোভকারী তরুণী বলেন, “দূষণ আমাদের জীবন কেড়ে নিচ্ছে।”

গবেষণা সংস্থা দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ভারতে বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ৩৮ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) জানিয়েছে, দূষিত বাতাস শিশুদের তীব্র শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়াশায় মোড়ানো আকাশের নিচে বিক্ষোভে মানুষের ভিড় আরও বাড়ে। পরে পুলিশ এসে বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করে। এসময় তাদের পোস্টার ও ব্যানার বাজেয়াপ্ত করে। অনুমতি ছাড়া তারা বিক্ষোভ করছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর মধ্যেই একটি ছেঁড়া প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল— “আমি শুধু নিঃশ্বাস নিতে চাই।”


মন্তব্য