২ দিনে ৫ কর্মকর্তা বাধ্যতামূলক অবসরে
কী হচ্ছে এনবিআরে?
- বিশেষ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৮:২২ PM , আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৬ PM

একের পর এক শাস্তিমুলক সিদ্ধান্তে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বাের্ডে (এনবিআর)। সদ্য সমাপ্ত আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত দুই দিনে সংস্থাটির বেশ কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আন্দোলনে যুক্ত কর্মকর্তাদের অনেকই চাকরী হারানোর শংকায় আছেন। সরকার গত দুই দিনে মোট ৫ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামুলক অবসরে পাঠিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ আরো চার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামুলক অবসরে পাঠায় প্রশাসন ক্যাডার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অর্থ মন্ত্রনালয়। সরকারের এমন কঠোর অবস্থানে যেন এখন চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
তবে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে প্রশ্ন উঠেছে সরকার আসলে কি করতে চাচ্ছে? নাকি সরকারকে অন্ধকারে রেখে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সদ্য ঘোষিত অধ্যাদেশের মাধ্যমে রাজস্ব ক্যাডারের ক্ষমতাকে খর্ব করে নিজেরা এনবিআরের শীর্ষ পদগুলো দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে?
এদিকে বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) হতে জারি করা পৃথক আদেশে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন চার কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কথা জানানো হয়েছে। তারা হলেন-কাস্টমসের শুল্কনীতির সদস্য হোসেন আহমদ ও ভ্যাটনীতির সদস্য ড. আব্দুর রউফ, আয়কর বিভাগের এনবিআর সদস্য আলমগীর হোসেন ও কর কমিশনার শাব্বির আহমদ।
চার কর্মকর্তার অবসরের আদেশে বলা হয়, তাদের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। জনস্বার্থে তাদেরকে সরকারি চাকরি হতে অবসর প্রদান প্রয়োজন হবে-এ বিবেচনায় সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-এর ৪৫ ধারার ক্ষমতা বলে তাদেরকে সরকারি চাকরি হতে অবসর প্রদান করা হলো। তবে তারা বিধি অনুসারে অবসরজনিত সুবিধাদি পাবেন।
এদিকে এ বিষয়ে এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এনবিআর ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কয়েক দিন আগে এনবিআরে যে আন্দোলন হয়েছে, এর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এসব কর্মকর্তাকে অবসর প্রদান করা হতে পারে। যদিও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, কাজ করলে সমস্যা হবে না। এছাড়া আন্দোলনের পরদিন এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান সবাইকে সবকিছু ভুলে রাজস্ব আহরণে মনযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এনবিআর সূত্র জানায়, মূলত ৩ ভারতীয় অর্থনীতিবিদের প্রেসক্রিপসনেই এনবিআরকে বিলুপ্ত করে দুই ভাগ করার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে বর্তমান চেয়ারম্যান। আইএমএফে কর্মরত এ ৩ ভারতীয় অর্থনীতিবিদরা চাচ্ছে শত বছরের পুরাতন রাজস্ব আদায় কারী প্রতিষ্ঠানকে বিলুপ্ত করে সেখানে তাদের পছন্দের কর্মকর্তাদের বসাতে। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এনবিআরকে ভেঙ্গে পৃথক করার উদ্যাগ নেয়া হয়। কিন্তু এতে রুখে দাড়ায় বর্তমান কর্মরতরা। প্রতিবাদে তারা শাট ডাউন কর্মসূচির ডাক দেয়। এতে পুরো দেশের রাজস্ব ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। যার কারণে সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতায় কাস্টমস, শুল্ক, বন্দর, বন্ড সহ সকল অফিসকে অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা করে গেজেট পর্যন্ত জারি করা হয়।
অপরদিকে এনবিআরের আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একের পর এক অনুসন্ধান শুরু করে। মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার জাকির হোসেনকে হঠাৎ করেই বরখাস্ত করা হয়। এর বাইরে সিনিয়র কর্মকর্তা যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর অতিক্রম করেছে তাদেরকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এনবিআর কর্মকর্তা জানান, ভারতীয় অর্থনীতিবিদদের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে মরিয়া প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। যিনি শেখ হাসিনার সময়কালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ছিলেন। তাকে হাসিনা সরকারের ৩ জন তালিকাভুক্ত সচিব হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলো জুলাই অভ্যুত্থানে জড়িত থাকা নানা সংগঠন।
বর্তমান চেয়ারম্যানের এহেন কর্মকান্ডকে এনবিআর অচল করে রাজস্ব খাতে ধস নামার পায়তারা হিসেবেও মনে করছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।