মানববন্ধনে বক্তারা

চবিতে হামলার ঘটনায় গোটা জাতি স্তম্ভিত, বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি 

চবিতে হামলা
  © সংগৃহীত

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় গোটা জাতি স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি এলামনাই সোসাইটি উত্তরার নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সারাদেশের প্রাক্তন চবিয়ানরা প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দিবেন। 

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরায় শহীদ মীর মুগ্ধ মঞ্চের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তারা এ কথা বলেন। রাজধানীর উত্তরা কেন্দ্রীক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন সিইউ এলামনাই সোসাইটি উত্তরা এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে সংগঠনের প্রায় শতাধিক সাবেক চবিয়ানরা অংশ নেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে জাফরুল রানা বলেন, “গভীর ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি। আমাদের শত শত সন্তানসম অনুজ  শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হয়েছে। অনেকে এখনও হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে।"

জনপ্রিয় অনলাইন এক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হক বলেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক  ছিলেন। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অনেকে সাবেক চবিয়ান, বিশ্বের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক শিক্ষার্থী। কিন্তু সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের অনেক সাবেক চবিয়ানও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। তাদের নীরবতা আমাদের মত সকল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের হতাশ করেছে। এ ঘটনায় একটি স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। 

ইংরেজী ডেইলি নিউ নেশনের বিশেষ প্রতিনিধি ও সাংবাদিক নেতা কামরুজ্জামান বাবলু বলেন, শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, চবির প্রো ভিসি (প্রশাসন), প্রক্টর ও একাধিক শিক্ষকও হামলার শিকার হয়েছেন। ক্যাম্পাসের ভেতর ও আশপাশে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা এখনও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। প্রশাসনের ব্যর্থতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলেও তিনি দাবি করেন।

তিনি বলেন, জোবরা বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন কোনো এলাকা না যে সেখানকার সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা যাবে না। সরকারের আইন-শৃংখলা বাহিনীর র্নিলিপ্ততায় মূলত সেদিন নিরস্ত্র শির্ক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হামলার সুযোগ পেয়েছে। এ ঘটনায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর গাফিলতির প্রমান পাওয়া গেলে তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সাবেক ছাত্রনেতা মুহাম্মাদ মেজবাহ উদ্দিন নাঈম বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়, কেবল সাবেক চবিয়ান হিসেবে বিবেকের তাড়না থেকে এবং অনুজদের প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতা থেকে আমরা এ মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। আমরা সংগঠিত ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার চাই।

সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল মতিন বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সারাদেশের প্রাক্তন চবিয়ানরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

এছাড়াও মানববন্ধনে খাইরুল আলম, জি এম ফারুক স্বপন, ওয়াকিলুর রহমান, মইনুল হোসেন, আব্দুল কাদের, মহসিন আলম, আবদুস সবুর, জয়নাল আবেদীন, মুজাহিদুল ইসলাম, জুয়েল মুহাম্মাদ জাকারিয়া, জিয়াউল করিম সোহেল, জনি আকন্দ, ইকরামুল হাসান, কাজী নাজমুল ইসলাম, তানজিলা সাথী, তামান্না তাসমিয়া তুয়া সহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে মানববন্ধনের শুরুতে সংগঠনের সিনিয়র সদস্য আহসানুল বারী ৬ দফা লিখিত দাবি পেশ করেন।
উত্থাপিত দাবিগুলো হলো—

১. হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন ও দ্রুততম সময়ে রিপোর্ট প্রকাশ।

২. আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারকে বহন করতে হবে।

৩. ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান।

৪. চবিতে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ।

৫. শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা জোরদার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীকে সক্রিয় করা।

৬. স্থানীয় অধিবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে ভবিষ্যৎ সহিংসতা ঠেকাতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা।

শেষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করায় সবার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কর্মসূচি শেষ করেন।


মন্তব্য