ট্রাম্পের এসএনএপি ইস্যুতে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা
- কামরুজ্জামান বাবলু, নিউইয়র্ক (যুক্তরাষ্ট্র) থেকে :
- প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪২ AM , আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪০ PM
ফুড স্ট্যাম্প বা খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি বা এসএনএপি (Supplemental Nutrition Assistance Program ) –এর নিয়মে বড় পরিবর্তন আসছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত “ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল আইন” অনুযায়ী নতুন নির্দেশনা আগামী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে, যা অনেকের জন্য নতুন শর্ত ও অনিশ্চয়তা বয়ে আনবে।
সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি আসছে কাজের শর্তে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী এখন থেকে ৬৪ বছর বয়স পর্যন্ত প্রায় সব প্রাপ্তবয়স্ককেই দেখাতে হবে যে তারা মাসে অন্তত ৮০ ঘণ্টা কাজ করছেন, স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে যুক্ত আছেন, অথবা কোনো প্রশিক্ষণমূলক কাজে অংশ নিচ্ছেন। আগে যাঁরা এই শর্ত থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন—যেমন সাবেক সেনা সদস্য, আশ্রয়হীন মানুষ বা ফস্টার হোমে বেড়ে ওঠা তরুণরা—তাঁরাও এখন এই নিয়মের আওতায় আসবেন।
এই নতুন শর্ত পূরণের প্রমাণ দিতে হবে আগামী বছরের ১ ডিসেম্বরের মধ্যে। কেউ যদি শর্ত পূরণে ব্যর্থ হন, তবে ২০২৬ সালের মার্চ মাস থেকে তাঁদের খাদ্য সহায়তা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। তবে যেসব পরিবারে ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু আছে, গর্ভবতী নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আগের মতোই এই নিয়ম থেকে মুক্ত থাকবেন।
নিউইয়র্ক সিটির মানবসম্পদ প্রশাসন বিভাগ যাঁদের ওপর নতুন নিয়ম প্রযোজ্য, তাঁদের সরাসরি জানাবে। যদি কেউ কোনো চিঠি বা বার্তা না পান, তাহলে তাঁর জন্য এই নতুন শর্ত প্রযোজ্য নয় এবং আগের নিয়মেই তিনি সহায়তা পাবেন।
যাঁরা এই নতুন নিয়মের আওতায় পড়ছেন, তাঁদের জন্য কয়েকটি বিকল্প রাখা হয়েছে। তাঁরা মাসে অন্তত ৮০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন, অথবা সমান সময়ের কোনো প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। চাইলে কাজ ও প্রশিক্ষণ মিলিয়ে সময় পূরণ করা যাবে। এছাড়া, প্রশাসন অনুমোদিত সামাজিক সেবা বা কর্ম–অভিজ্ঞতা কার্যক্রমেও অংশ নিলে শর্ত পূর্ণ হবে। প্রতিজনের সহায়তার পরিমাণ অনুযায়ী সময় নির্ধারণ করা হবে, যা অনেক সময় ৮০ ঘণ্টারও কম হতে পারে।
প্রশাসন যাঁদের এই নিয়মে অন্তর্ভুক্ত করবে, তাঁদের চিঠি পাঠিয়ে জানাবে কীভাবে শর্ত পূরণ করতে হবে। কেউ যদি বর্তমানে এই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হন, তাহলে তাঁকে পাথওয়ে নামে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ডাকা হবে, যেখানে কর্মকর্তারা তাঁকে উপযুক্ত কাজ বা প্রশিক্ষণ খুঁজে দিতে সহায়তা করবেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যাঁদের চিঠি পাঠানো হবে, তাঁদের অবশ্যই সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে হবে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে এবং সময়মতো প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। এ নির্দেশনা না মানলে খাদ্য সহায়তা স্থগিত হতে পারে।
এদিকে সাম্প্রতিক সরকারি অচলাবস্থার কারণে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন রাজ্য সরকারগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে নভেম্বর মাসের সুবিধা আপাতত স্থগিত রাখতে, যদিও তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। এর ফলে লাখ লাখ বাসিন্দা সময়মতো খাদ্য সহায়তা না পাওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। তবে ইতোমধ্যে যাঁদের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে, তাঁদের কার্ড আগের মতোই সচল থাকবে। স্থানীয় অফিসগুলো খোলা আছে, নতুন আবেদন ও পুনর্নবীকরণ প্রক্রিয়াও চলবে।
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস সদস্য অ্যালেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজের দপ্তর জানিয়েছেন, তাঁদের অগ্রাধিকার হলো যেন কোনো পরিবার খাবারের সংকটে না পড়ে। জনগণকে নির্দেশনা অনুসরণ করতে, প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে এবং প্রয়োজনে সরাসরি সহায়তা চাইতে উৎসাহিত করা হয়েছে।