হজ্বে দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে কাজ চলছে : ধর্ম উপদেষ্টা

হজ্ব
  © বাংলাকণ্ঠ

পবিত্র হজ্ব ও ওমরায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম কমাতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, এই মধ্যস্বত্বভোগীদের অত্যাচার থেকে যাতে হজ্জ ব্যবস্থাপনাকে মুক্ত রাখা যায়, সেই ব্যপারে আমরা সচেষ্ট। তাদের ব্যপারে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

উপদেষ্টা আজ বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিনদিনব্যাপী হজ্জ ও ওমরাহ মেলা-২০২৫ এর উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। হজ্জ এজেন্সীস অব এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত মেলা চলবে আগামী ১৬ আগস্ট পর্যন্ত। দর্শনার্থীদের জন্য মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে।

ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, যেসব হজ্জ এজেন্সির পারফরমন্স ভালো, সৌদি আরবের ডেটলাইন মেনে অগ্রসর হয়েছেন তাদের সনদ দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশনা দিয়েছেন। হজ্জের ক্যাটারিং সৌদি সার্ভিস কোম্পানীর তত্ত্ববধানে রাখার বিধান বাতিলের জন্য সৌদি সরকার বরাবর ডিও লেটার দিয়েছেন উল্লেখ করে ধর্ম উপদেষ্টা খালিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশী হাজী সাহেবেরা সৌদি আরবের খাবার খেতে অভ্যস্ত নয়। আমি মক্কা শরীফ থেকে মিনায় যাওয়ার সময় একবেলার খাবার নিয়ে গেছি। কত আর দুম্বার গোস্তের বিরায়ানী খাওয়া যায়। আমরা এসব খাবারে অভ্যস্ত নই। এটা বাতিল করতে বলেছি। তিনি (সৌদি মন্ত্রী) আমাকে বার্তা দিয়ে বলেছেন ভাইস মিনিস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। সচিব মহোদয় বিষয়টি নিয়ে আলাপ করবেন।

হাজীদের যে কোন সমস্যা হলে সরকারকে জানাতে আহ্বান জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমরা একে অপরের পরিপূরক, সম্পূরক। এক পরিবারে হয়ে টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করব। সৌদি ডেটলাইন আমাদের ফলো করতে হবে। বিমান ভাড়া নির্ধারণে কাজ শুরু করেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাব এর প্রতিনিধি থাকবেন। 

তিনি মধ্যস্বত্বভোগী দৌরাত্ম কমাতে হাব এর সহযোগিতা চেয়ে তাদের অত্যাচার থেকে যাতে হজ্জ ব্যবস্থাপনাকে মুক্ত রাখা যায়, সেই ব্যপারে আমরা সচেষ্ট। তাদের ব্যপারে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাব এর সহযোগিতা পেলে ২০২৬ সালের হজ্ব ২০২৫ সালের চেয়েও ভালো করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

হাব’র যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ জাফর উদ্দিনের সঞ্চালনায় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন আরও বলেন, হাব এর সহযোগিতা ও পরামর্শে গত বছর একটি সুন্দর হজ্জ উপহার দেয়া সম্ভব হয়েছে। ২০২৬ সালের হজ্জের কার্যক্রমও শুরু করেছি। আপনাদের সহযোগিতা চাই। আশাকরি সরকার ও হাবের পারস্পরিক পরামর্শ, মতবিনিময় সহযোগিতার মাধ্যমে সুন্দর হজ্জ উপহার দিতে পারব ইনশা আল্লাহ।

এর আগে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন মেলার উদ্বোধন করেন। হাব সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার এর সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরব দূতাবাসের উপ মিশন প্রধান ইব্রাহিম আব্দুল্লাহ আল আহমারী, হাব মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার, সহসভাপতি শামীম সাঈদী, সাবেক সভাপতি ইব্রাহীম বাহার, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এমডি মো. রাফাত উল্লা খান।

অনুষ্ঠানে সরকার ও হাব প্রতিপক্ষ নয় মন্তব্য করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বলেন, পারস্পরিক সম্প্রীতি, আস্থার পরিবেশ বজায় রেখে আমরা কাজ করছি। ২০২৫ সালের হজ্জ ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে হাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য পূরণে কোন ধরণের গ্যাপ হয়নি।

তিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে কাজ করব। কিছু সমস্যা থাকবে। সেটা ঘটার আগেই চিহ্নিত করব। যাতে সমস্যার ঘটার আগেই সমাধান করা যায়।

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ গোলাম সরওয়ার বলেন, গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ আমাদের অতিক্রম করতে হবে। সেখানে বলা হয়েছে ক্যাটারিং ও বাড়িভাড়া মোয়াল্লিমের অধীনে থাকবে। কিন্তু বাংলাদেশের লোকদের যে খাদ্যাভাস সেটির সঙ্গে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল নেই। তা খেয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে ফিরবে। বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। তারাও আমাদের সঙ্গে একমত বিষয়টিতে। 

২০২৬ সালের হজ্জর রোডম্যাপের কথা জানিয়ে হাবের সভাপতি বলেন, যেসব হজ্জ এজেন্সি ভালো কাজ করে, কোন অভিযোগ নেই। তাদের ২০২৬ সালের হজ্বে সুযোগ দেব। আমাদের সমস্যাগুলো সমাধানে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধান করার জন্য চেষ্টা করব। আর সৌদি আরবের আইন আমাদের মানেতে হবে। সেটা সবাইকে জানতে হবে। 

বিমান ভাড়া ৫০ হাজার টাকা কমানোর দাবি জানিয়ে হাবের সভাপতি বলেন, গতবারের চেয়েও বিমান ভাড়া ৫০ হাজার টাকা কমানোর চেষ্টা করছি। ২০২৫ সালের নেওয়া বিমান ভাড়া ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার কমিয়ে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা হওয়া উচিত। এ নিয়ে চিঠি দেব। যখন বিমান ভাড়া নির্ধারিত হবে, তখন যেন আমাদের সংযুক্ত করেন। 

হাবের মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, হজ্জ ও ওমরাহ ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলার মূল কারণ হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী। তারা গ্রামগঞ্জ থেকে সহজ-সরল মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে হজযাত্রী ও টাকা সংগ্রহ করে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্মপ্রাণ মানুষ প্রতারিত হয়ে থাকেন। বারবার প্রচারণা সত্বেও সাধারণ মানুষ হজ্জ এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। এ মেলা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে হজযাত্রীদের সঙ্গে সরকার নিবন্ধিত এজেন্সির যোগসূত্র তৈরি করা। হজে আগ্রহীরা এজেন্সি হতে পছন্দের প্যাকেজ নিয়ে ২০২৬ সালের হজে প্রতারণা ও হয়রানী মুক্তভাবে হজ্জ পালন করতে পারেন। 

গত বছরের হজ্জ তিনদিন মোয়াল্লেমের খাবার বাধ্যতামূলক রাখার কথা উল্লেখ করে হাবের মহাসচিব বলেন, এ তিনদিনের খাবার খেয়ে হাজী সাহেবগণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাননীয় উপদেষ্টা ও সচিবে মহোদয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। ৩০-৪৫ দিন আমাদের হাজীদের যদি সে খাবার খেতে বাধ্য হলে তারা স্বাচ্ছন্দে, সুস্থভাবে হজ্জ পালন করতে পারবেন না। এ বিষয়ে সরকার হতে চিঠি দেওয়া হয়েছে সৌদি আরবে। আমাদের অনুরোধ শুধু পত্র পাঠানোতে সীমাবদ্ধ না থেকে কূটনৈতিক চ্যানেলেও সৌদি সরেকারকে জানতে। মোয়াল্লিমের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া করলে হজ যাত্রার খরচ অনেক বাড়বে। সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সম্মেলন শেষে ধর্ম উপদেষ্টা মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। তিনি বিভিন্ন এজেন্সির প্রতিনিধি ও আগত দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন, খোঁজ-খবর নেন।


মন্তব্য