মন্তব্য প্রতিবেদন
অস্ট্রেলিয়ায় সূর্য্যের আলোয় ট্রেন চালু, গ্রীষ্মপ্রধান বাংলাদেশে কতদূর?
- বাংলাকন্ঠ ডেস্ক:
- প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৫, ০২:০৪ AM , আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৫, ০২:০৪ AM

একবার ভাবুন তো, এমন একটি ট্রেনে চড়ছেন, যা এক ফোঁটা তেল বা গ্যাস ছাড়াই ছুটে চলেছে মাইলের পর মাইল, এক শহর থেকে আরেক শহরে।
শুধু সূর্যের আলোয় ছুটে চলছে সেই ট্রেন। হ্যাঁ, কোনো কল্পকাহিনি নয়, এটি বাস্তব। আর এই বাস্তবতাটিই গড়ে তুলেছে অস্ট্রেলিয়ার বায়রন বে সোলার ট্রেন (Byron Bay Solar Train), যেটি বিশ্বের প্রথম শতভাগ সৌরশক্তিচালিত যাত্রীবাহী ট্রেন।
দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলসের ছোট্ট শহর বায়রন বে'তে যখন এই ট্রেনটির যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে, তখন কেউ ভাবেনি এটি একদিন হয়ে উঠবে সবুজ প্রযুক্তির প্রতীক। মাত্র ৩ কিলোমিটার রেলপথে চলা এই ট্রেনটি যেন একটি পরিবেশবান্ধব বিপ্লবের সূচনা।
এ ট্রেনটি চলে মূলত সূর্য্যের আলোয়। অর্থ্যাৎ সূর্যই চালায় এ ট্রেনটি, যা অস্ট্রেলিয়ার অনন্য পরিবেশবান্ধব যাত্রা।
শুধু কি তাই? সূর্য্য শুধু চালায়ই না এর ইঞ্জিনিয়ারও বটে।
কারণ ট্রেনটির ছাদজুড়ে রয়েছে ৬০টিরও বেশি সৌর প্যানেল, যা দিনের আলোকে ধরে ব্যাটারিতে রূপান্তর করে শক্তিতে। ফলে বৃষ্টি হোক, মেঘ হোক, এমনকি রাতেও ট্রেনটি চলতে পারে—কোনো রকম কার্বন নিঃসরণ ছাড়াই। সেজন্য শব্দহীন, ধোঁয়াহীন, দূষণহীন এই ট্রেনটিকে অনেকেই বলেন "গতির নীরব বিপ্লব (A silent revolution on tracks)."
আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই ট্রেনটি কোনো নতুন প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি হয়নি। বরং এটি একটি পুরোনো ডিজেল ট্রেনকে রিনোভেট করে তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রযুক্তি আর পরিবেশ সচেতনতাকে একসূত্রে গেঁথে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়েছে ফেলে দেওয়া জিনিসকেই। সেজন্যই এটিকে সবুজ ভবিষ্যতের দিশা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
কারণ, এই ট্রেনটি প্রতি বছর সত্তর হাজার কেজিরও বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ রোধ করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা যখন আমাদের শ্বাস নিতে দিচ্ছে না, তখন এ ট্রেনটি যেন বিশ্ববাসীকে একটাই বার্তা দিচ্ছে তা হচ্ছে 'প্রযুক্তিও হতে পারে প্রকৃতির বন্ধু।'
তবে এ ট্রেনের মূল শক্তি যেখানে সূর্য্য সেখানে সঙ্গত কারণে বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি আসতেই পারে। কারণ সোলার প্যানেলের ব্যবহার নবায়নযোগ্য শক্তি ও পরিবেশ বান্ধব। ইউরোপ আমেরিকা শীতপ্রধান হবার পরেও সোলার প্যানেলের সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে।
কিন্তু বাংলাদেশ কর্কটক্রান্তি অক্ষরেক্ষার মধ্যে পড়ছে যেখানে সূর্যের আলো বিকিরিত হয় লম্ব ও তির্যক আকারে। এছাড়া আমাদের দেশ মূলত গ্রীষ্মপ্রধান। তাই এখানে সূর্যের তাপমাত্রা ইউরোপ আমেরিকার থেকে অনেক বেশি যা আমরা কাজে লাগাতে পারি সোলার প্যানেলের ব্যবহার হিসেবে। বিদ্যুৎ এর বিকল্প হিসেবে বাসা/বাড়ির চাহিদা মেটানো সোলার প্যানেলের পক্ষে সম্ভব। এজন্য সরকার ও বেসরকারি এনজিও জনগনের সচেতনতা ও ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিবিদদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন করা এখন সময়ের অন্যতম দাবি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ যখন সচেতনতা নিয়ে কাজ করছে তখন উন্নত রাষ্ট্রগুলো কিভাবে সোলার প্যানেলের উন্নয়ন সাধন করে বিশ্বকে উন্নয়নের দিকে ধাবিত করা যায় তা নিয়ে কাজ করছে।
বাংলাদেশের মানুষ যখন প্রতিদিন ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়া শহরে বাঁচতে শিখে ফেলেছে, তাদের জন্য এই ট্রেনটি হতে পারে আশা ও সম্ভাবনার নতুন গন্তব্য। সৌরশক্তির সঠিক ব্যবহার যে কতটা বিস্ময়কর হতে পারে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার এই ছোট্ট ট্রেনটি।