পুঁজিবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ রিয়াজ ইসলাম

রিয়াজ
  © ফাইল ছবি

পুঁজিবাজারের সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী ও প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রিয়াজ ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রতিষ্ঠানটির ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ অপব্যবহারের দায়ে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

একই ঘটনায় যোগসাজশের দায়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকেও পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে বেক্সিমকোর বন্ড সংক্রান্ত অনিয়মের কারণে তাকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নতুন এ ঘটনায় দুই দফায় তিনি আজীবনের জন্য পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ হলেন। বিএসইসির সভা শেষে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।

ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ অপব্যবহারের ঘটনায় রিয়াজ ইসলাম ও শিবলী রুবাইয়াত ছাড়াও সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টকেও ফান্ড ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

একই সঙ্গে অনিয়মের দায়ে ছয় ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯ কোটি ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানাপ্রাপ্তরা হলেন—রিয়াজ ইসলাম, রেজাউর রহমান সোহাগ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শরীফ আহসান, মদিনা আলী, সৈয়দ কামরুল হুদা, ওমর শোয়েব চৌধুরী এবং বাংলাদেশ জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানি (বিজিআইসি)।

এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে বিজিআইসিকে, আর বাকি ছয় ব্যক্তিকে প্রত্যেকে ১ কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। তবে রেজাউর রহমান সোহাগকে অতিরিক্ত ১০ লাখ টাকা এবং শরীফ আহসানকে অতিরিক্ত ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বিএসইসি জানিয়েছে, শেয়ারবাজারে ওটিসি বাজারে থাকা বন্ধ কোম্পানি পদ্মা প্রিন্টার্সের শেয়ারে বিনিয়োগের নামে এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রায় ৬৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। দুই দফায় এই বিনিয়োগ করা হয়েছিল। প্রথম দফায় বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানি পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালারের ৫১ শতাংশ শেয়ার চড়া মূল্যে অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ২৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। এই শেয়ার অধিগ্রহণের পর কোম্পানিটির নাম বদলে করা হয় কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড। নামবদলের পর কোয়েস্ট বিডিসির মূলধন বাড়াতে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে নতুন শেয়ার ইস্যু করে ছয়টি ফান্ড থেকে দ্বিতীয় দফায় ৪৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়। বিএসইসি বলছে, বন্ধ ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ার চড়া মূল্যে কিনে ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে এই অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে মূলত ফান্ডগুলোর ইউনিটধারীদের অর্থেরই অপচয় করা হয়েছে। এ কারণে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানটি ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসইসি। সেই সঙ্গে ছয়টি ফান্ড থেকে বিনিয়োগ করা অর্থ–সুদসহ ৯০ কোটি টাকা ৩০ দিনের মধ্যে ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসি জানিয়েছে, এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী রিয়াজ ইসলামকে এই অর্থ ফান্ডগুলোতে ফেরত আনতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই অর্থ ফেরত আনতে না পারলে তার জন্য রিয়াজ ইসলামকে ৯৮ কোটি টাকা এবং এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের পরিচালক জর্জ এম স্টক ও রেজাউর রহমান সোহাগকে ১ কোটি টাকা করে মোট ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে বলেও বিএসইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনায় থাকা যে ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ নিয়ে এই অনিয়ম ও অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো হলো এনসিসিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড, এলআর গ্লোবাল মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও গ্রিন ডেলটা মিউচুয়াল ফান্ড।


মন্তব্য