সুযোগ থাকলেও ইউরোপে যাচ্ছে না বাংলাদেশিরা!

বাংলাদেশি
  © ফাইল ছবি

জার্মান প্রবাসী আসিফ হায়দার অপু সম্প্রতি দুই মাসের ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। ২০১০ সালে তিনি জার্মানিতে পাড়ি দেন এবং বর্তমানে ওভারহাউজেন শহরে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে টিম লিডার হিসেবে কর্মরত আছেন।

নিজের জীবনযাত্রার মান এবং নিরাপত্তার কারণে তিনি জার্মানিতে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং শিগগিরই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আসিফের মতে, জার্মানিতে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায় এবং সকল স্তরের মানুষ একটি নির্দিষ্ট জীবনযাত্রার মান বজায় রাখে, কারণ সেখানে সরকারের নির্ধারিত সর্বনিম্ন মজুরি প্রতি ঘণ্টার ভিত্তিতে কার্যকর।

আসিফ আরও উল্লেখ করেছেন, জার্মানি এবং ইউরোপ জুড়ে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা ব্যাপক। অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য অভিবাসনের সুযোগ সীমিত, কারণ ভাষা ও প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে তারা অনেক ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে না। উচ্চশিক্ষার (ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডি) জন্য আগ্রহী প্রার্থীরা স্টুডেন্ট ভিসা ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারেন। অন্যদিকে, যারা কাজের অনুমতি নিয়ে যেতে চান, তাদের অবশ্যই দক্ষ কর্মী হতে হবে।

ফিনল্যান্ডে বসবাসকারী আরেক বাংলাদেশি প্রবাসী, সাইফুল ইসলাম, ২০০৫ সালে রোমানিয়া থেকে ইউরোপ জীবন শুরু করেন। তিনি স্টুডেন্ট ভিসায় রোমানিয়ার তিমিসোয়ার ইউনিভার্সিটিতে এসেছিলেন। ২০০৭ সালে রোমানিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হলে তিনি ইউরোপীয় নাগরিকের পারিবারিক সদস্য হিসেবে ফিনল্যান্ডে চলে আসেন। তিনি ১,০০০ ইউরো নিয়ে একটি রক্ষণাবেক্ষণ সেবার ব্যবসা শুরু করেন এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ১০টি রেস্তোরাঁর মালিক হয়েছিলেন। ভ্রমণপ্রিয় হওয়ায় তিনি পরে ৮টি রেস্তোরাঁ বিক্রি করে দেন এবং বর্তমানে ২টি রেস্তোরাঁ ও একটি ক্লিনিং কোম্পানির মালিক।বিএমইটি (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ১০ লাখ ১১ হাজারেরও বেশি কর্মী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ইউরোপের দেশগুলোতে গেছেন মাত্র ১৬,০৭৭ জন।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ এবং অন্যান্যরা মনে করেন যে, বাংলাদেশের উচিত বিশ্বব্যাপী চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। বিশেষত স্বাস্থ্যসেবা, হোম কেয়ারের মতো খাতে প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরি করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ভাষা জ্ঞান এবং বয়সভেদে যত্ন নেওয়ার মানসিকতাও গুরুত্বপূর্ণ। সরকার এবং রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর উচিত এইসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া। তাঁরা আরও উল্লেখ করেন যে, প্রতিবেশী দেশগুলো এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে।এছাড়া, অভিবাসন খাতে সরকারের দুর্বলতা এবং কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। সরকারের উচিত ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর সদ্ব্যবহার করে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে জোর দেওয়া।


মন্তব্য